ইমদাদুল হক,পাইকগাছা,(খুলনা)।।
পাইকগাছায় শীতের আগমনে গাছিরা খেঁজুরের রস আহরণের জন্য গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। গ্রামের
পরিত্যাক্ত জায়গা ও আকা-বাকা পথের পাশে ডোবা-পুকুর পাড়ে সারি সারি অপরিচ্ছিন্ন খেজুর গাছগুলোর পুরানো
ডাল পালা কেটে পরিষ্কারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং অনেক গাছের পরিচর্যা চলছে।জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে
উপকূল এলাকার মৌসুমগুলি কিছু দেরিতে শুরু হয়। পাইকগাছা উপজেলা ঘুরে সরেজমিনে দেখা গেছে শীতের তীব্রতা
দেখা না দিলেও এরই মধ্যে অনেক গাছি খেজুর রস সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। গ্রামীণ জীবনে শীত এ অঞ্চলের
গাছিদের কাছে বিভিন্ন মাত্রায় রূপ নিয়ে আসে। নানা স্বপ্ন আর প্রত্যাশায় তাদের অনেকটা সময় কেটে যায় এই
খেজুর গাছের সাথে। সারাদিন এক গাছ থেকে অন্য গাছ এভাবেই তাদের দিন কেটে যায়। গাছির জীবন
সংগ্রামে বহু কষ্টের মাঝে অনেক প্রাপ্তিই মিটে যায় গ্রাম বাংলার এই জনপ্রিয় বৃক্ষ খেজুর গাছের রস আহরণের
সাথে।গাছিদের কাছে এই সময়টা হয় অনেক আনন্দের।গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের সাথে খেঁজুরের রস ও শীতকালের সঙ্গে
নিবিড় সম্পর্ক। শীতের মূল উৎসবই হলো শীতের পিঠা ও পায়েশ। যার মূল উপাদান খেঁজুরের রস, ঝোলাগুড় ও পাটালী।
শীতের সকালে রোদে বসে যেমন পিঠা খেতে শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ সকলের ভাল লাগে। শিশু, যুবক, বৃদ্ধ সবাই
মেতে উঠে পিঠা খাওয়ার উৎসবে। এ বছর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে খেঁজুরগাছ পরিচর্যার কাজ প্রায় শেষ করেছেন
গাছিরা। গাছের মাথায় অনেকখানি বাকল তুলে সেখানে হাঁড়ি বেঁধে এ রস সংগ্রহ করা হয়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ৪৬ হাজার ২শ’ রস আহরণযোগ্য
খেঁজুরগাছ আছে। উপজেলার গদাইপুর গ্রামের গাছি আফিল উদ্দীন জানান, অন্য মৌসুমে তিনি বিভিন্ন কাজ
করেন। কিন্তু শীত এলেই খেঁজুরগাছ কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ অঞ্চলে খেঁজুর রসের পর্যাপ্ত চাহিদা থাকায় ভালো
আয় করেন। এছাড়া শীতের সময় ধনী-গরীব সকলের কাছে খেঁজুরের গুড়েরও বেশ চাহিদা।
তিনি আরো জানান, তার নিজের গাছের সংখ্যা খুবই কম। বেশির ভাগই অন্যের গাছ কেটে রস সংগ্রহ করতে হয়।
তাই গাছের মালিককে রসের একটা অংশ দিতে হয়। তারপরেও প্রতিবছর তিনি রস ও গুড় বিক্রি করে লাভবান হন। তবে
বেশি লাভবান হন কাচা রস বিক্রয় করে। উপজেলার গদাইপুর, গোপালপুর, রাড়–লী, কপিলমুনি, মঠবাটী, পুরাইকাটী,
মালথ, সিলিমানপুর সহ বিভিন্ন গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ এলাকার গাছিরা গাছের পরিচর্যা শেষ
করেছে এবং কেউ কেউ রস আহরণ শুরু করেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এএইচএম জাহাঙ্গীর আলম জানান, খেঁজুর গাছের সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে
খেঁজুর গাছ থেকে রস আহরণ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। তাছাড়া গাছির অভাবে অনেক গাছ থেকে রস আহরণ করা যায়
না। প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে খেঁজুর গাছের ভূমিকা অপরিসীম। তাই কৃষি অফিস থেকে এলাকার খেঁজুর
গাছ রোপন করার জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
Leave a Reply